ইউক্রেনে রাশিয়ার পরমাণু হামলার সম্ভাবনা কী ঘনীভূত হচ্ছে

প্রায় ২০ মাস ধরে হামলা চালিয়েও ইউক্রেনকে নতি স্বীকার করাতে পারেনি রাশিয়া ৷ পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তায় দেশটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ৷ বিশাল সেনাবাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোনসহ নানা সামরিক সরঞ্জাম কাজে লাগানো সত্ত্বেও মস্কো ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের কিছু অঞ্চল বেদখল করে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে ৷ এমন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট মরিয়া হয়ে পরমাণু শক্তি কাজে লাগাতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে ৷ ইউক্রেনের কোনো পরমাণু কেন্দ্রে বিপর্যয় ঘটানো কিংবা সরাসরি পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দেশের পশ্চিমে খমেলনিৎস্কি অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালিয়ে রাশিয়া সম্ভবত সেখানকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আঘাত আনতে চেয়েছিল ৷ দৈনিক ভিডিও বার্তায় তিনি রাশিয়ার ওপর আরও কড়া নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন তুলে ধরেন ৷ সেই হামলায় ভবনটির কাচ ভেঙে ২০ জন আহত হয় ৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, হামলার ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বা গ্রিডের সঙ্গে সংযোগে কোনো বিঘ্ন ঘটে নি৷ তবে সংস্থার মহাসচিব রাফায়েল গ্রসির মতে, পরের বার হয়তো আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে ৷ স্থানীয় গভর্নর সেরহি টিয়ুরিন জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলায় প্রায় ১,৭০০ ভবনের ক্ষতি হয়েছে৷ 

গত ২০ মাসে ইউক্রেনের পরমাণু কেন্দ্রগুলো একাধিকবার রুশ হামলার স্বীকার হয়েছে ৷ রাশিয়া ঝাপ্পোরিজিয়ায় ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে রয়েছে ৷ সেখানেও দুই পক্ষের সংঘর্ষের ফলে বারবার বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা গেছে৷ 

রাশিয়ার নেতৃত্ব বারবার পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে চলেছে ৷ পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ রাখার চুক্তি সিটিবিটি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৷ বুধবারই সেই আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ৷ সে দেশের উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, আমেরিকার ‘বৈরী’ নীতির কারণে রাশিয়া আর সে দেশের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ে সংলাপ চালাতে প্রস্তুত নয় ৷ তবে ওয়াশিংটন পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা না করলে মস্কোও পরীক্ষা চালাবে না বলে ঘোষণা করেছে ৷ সিটিবিটি চুক্তি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা না হলেও এই সময়কালে উত্তর কোরিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে নি৷ 

বুধবারই ক্রেমলিন পরমাণু অস্ত্র বাহিনীর মহড়ার কথা জানিয়েছে ৷ তার আওতায় দুটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল মিসাইল এবং বেশ কয়েকটি ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে ৷ উত্তরে ব্যারেন্ট সাগরে টুলা নামের পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন থেকে একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল মিসাইল নিক্ষেপ করা হয় ৷ তবে মহড়ার সময়ে ওয়ারহেড হিসেবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি বলে মস্কো জানিয়েছে ৷ স্বয়ং প্রেসিডেন্ট পুতিনের তত্ত্বাবধানে সেই মহড়া চালানো হয়েছে ৷ শত্রুপক্ষের পরমাণু হামলার প্রতিশোধ নিতে রাশিয়া কীভাবে নিজস্ব পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করবে, মহড়ায় সেই প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা হয়েছে বলে রুশ নেতৃত্ব জানিয়েছে৷ 

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদ রুশ সেনাবাহিনী আরও বড় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ পরিষদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ ও সামরিক জোট ন্যাটোর সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সৈন্যসংখ্যা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে ৷ ফলে বর্তমানে প্রায় দশ লাখ সৈন্যের বাহিনী আগামী কয়েক বছরে বাড়িয়ে ১৫ লাখে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৷

সূত্র- রয়টার্স

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //